Header Ads

ঘরডার বিতরে সব ভিইজ্জা গেছে, কিচ্ছু আনতাম পারছি না


অবস্থা অনেক খারাপ, ঘরদোরের সব কিছুই পানিতে ভাসছে- 

শুক্রবার রাতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। সন্তানদের নিয়ে স্কুলে চলে এসেছি। ঘরের কোনো কিছুই নেওয়া সম্ভব হয়নি, সব কিছুই পানিতে ভেসে গেছে। এখনো চার-পাঁচ দিনের খাবার ছাড়া আর কিছুই ভালো নেই।'

এই কথাগুলি বলছিলেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ফাতেমা বেগম। গত বৃহস্পতিবার রাতে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর বুড়িচং উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। একইভাবে, আদর্শ সদর উপজেলার ৩০টিরও বেশি গ্রামও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের মধ্যে রসুলপুর অন্যতম।

ফাতেমা বেগম জানান, ৬০ বছরের জীবনে প্রথমবারের মতো রসুলপুর এলাকায় এত বড় বন্যা দেখছেন।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রসুলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বিদ্যালয়ের আঙিনায় আশ্রয় নিয়েছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের সড়কের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি রয়েছে। 

সড়কের পশ্চিমে ফাতেমা বেগমের বাড়ি, যেখানে টিনের বেড়া দেওয়া পাকা মেঝে বন্যার পানিতে ফাটল ধরেছে এবং যেকোনো মুহূর্তে টিনের বেড়াটি খুলে পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়ির দুটি কক্ষে একটি ভাঙা জানালা এবং খাটে একটি লেপ ও তোশক রাখা আছে, যা কিছুটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। ঘরে উল্লেখযোগ্য কোনো আসবাব নেই এবং শেষ সম্বল নিয়ে ফাতেমার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

ফাতেমা জানান, ২০ বছর আগে তাঁর স্বামী মোসলেম মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে একজন রিকশাচালক এবং আরেকজন সিএনজি চালক। তারা আলাদা সংসার চালাচ্ছে। আনোয়ার হোসেন নামের একটি ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ফাতেমা থাকেন।

ফাতেমার ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন গাড়িচালক। কখনো ভাড়ায় প্রাইভেট কার চালিয়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করেন। দীর্ঘদিন কোনো আয় না হওয়ায়, মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ফাতেমা বলেন, 'সরকার থেকে তিন-চার বছর আগে ঘর পেয়েছি। এখন কিভাবে ঘর ঠিক করবো, চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গেছে।'

প্রতিবেশী রুমা আক্তার ইপিজেডে চাকরি করেন এবং বন্যায় তাঁরও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে কিভাবে ঘর ঠিক করবেন, তা জানেন না। নিজের কষ্টের কথা চেপে রেখে রুমা বলেন, 'ফাতেমা খালার জন্য মন খারাপ লাগছে। আমার ঘরও শেষ হয়ে গেছে, ফাতেমা খালার ঘরও শেষ। কী করবো, বুঝতে পারছি না।'

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, 'আদর্শ সদর উপজেলার ৩৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে, যার মধ্যে রসুলপুর গ্রামও রয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলিতে নিয়মিত ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। যাঁদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, তাঁদের জন্য সরকারিভাবে সহায়তা আসবে, এবং ফাতেমা বেগমের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.