Header Ads

ত্রাণ বিতরণে সংকট: কোথায় পৌঁছাচ্ছে না সাহায্য? ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে প্রয়োজন সমন্বয়


ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা: বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ ও জরুরি পদক্ষেপ

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় চলমান বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার বন্যার্তরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। এসব এলাকায় পানি নামছে ধীরগতিতে, ফলে দুর্ভোগ কমছে না।

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের অভিযোগ, সড়কের পাশে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষ একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছেন, কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গতদের সবাই সমানভাবে সহায়তা পাচ্ছেন না। বন্যার্তরা স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহায়তা চেয়েছেন, তবে প্রশাসন জানাচ্ছে, বরাদ্দকৃত ত্রাণের পরিমাণ অপর্যাপ্ত।

লক্ষ্মীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি জেড এম ফারুকী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি কামাল হোসেনের মতে, ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। অনেক ত্রাণ সরাসরি উঁচু সড়ক ধরে বিতরণ করা হচ্ছে, যার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানভাসি মানুষ প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাচ্ছেন না।

গতকাল মঙ্গলবার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যায় ১১টি জেলায় ৫৬ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জেলায় ত্রাণসামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে এবং বিতরণের জন্য ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ বিতরণে সমস্যা

ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলায় গত দুই দিনে পানি কিছুটা কমেছে, কিন্তু সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যায় আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ত্রাণ বিতরণের সমন্বয়হীনতার কারণে কিছু এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি।

জানা গেছে, গত পাঁচ দিনে জেলা প্রশাসন থেকে ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী ৩৮ হাজার খাবারের প্যাকেট হেলিকপ্টারে পৌঁছে দিয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবকরা ট্রাকে ত্রাণ নিয়ে গেছেন। তবে মহাসড়ক লাগোয়া এলাকাগুলোতে বেশি ত্রাণ পৌঁছালেও, দুর্গম গ্রামগুলোতে ত্রাণ কম পৌঁছেছে।

লক্ষ্মীপুরের দিঘলী ইউনিয়নের পূর্ব দিঘলী গ্রামের মানুষ সরকারি ত্রাণ পাননি, যদিও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু ত্রাণ পেয়েছেন। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, লাকসাম এবং নাঙ্গলকোটের বন্যার্তরা এখনও ত্রাণের অপেক্ষায় রয়েছে। কুমিল্লার জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে ত্রাণের পরিমাণ অপ্রতুল এবং আরও বরাদ্দ প্রয়োজন।

চিকিৎসার সংকট

ফেনী সদরের লেমুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের আলমগীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুই দিন ধরে অসুস্থ, কিন্তু চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। ফেনীর সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, গ্রামে চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি এবং জরুরি চিকিৎসা ক্যাম্প চালু করা হয়েছে।

আবাসন সংকট

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজানে প্রায় ১০ হাজার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে এবং খাগড়াছড়িতে ৪০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসাসেবায় দ্রুত সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হচ্ছে। প্রশাসনকে সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.