Header Ads

ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি


দেশ বন্যার ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ছাত্র-জনতার একটি সফল আন্দোলন শেষ হতে না হতেই, দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বন্যার কবলে পড়েছে। প্রশাসনিক রদবদল এবং স্থানীয় সরকারের শূন্যতার কারণে বন্যার্তরা মারাত্মক অসহায় অবস্থায় রয়েছে। ত্রাণ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত।

তবে, এই সংকটের মাঝেও একটি ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তার যে দৃশ্য চোখে পড়ে, তা প্রশংসনীয়। এটি নাগরিক সক্রিয়তার প্রমাণ এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনা জাগরুক রয়েছে।

তবে, এই ইতিবাচক চিত্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগও আছে, যা আলোচনা করার প্রয়োজন। কিছু ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে এমন খাবার রয়েছে, যা বন্যার্তদের সাহায্য না করে তাদের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষভাবে, কিছু খাবার শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ত্রাণ হিসেবে গুঁড়া দুধ, রাসায়নিক মিশ্রিত জুস ও সিরিয়াল বিতরণ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ শিশুর খাবারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এভাবে সাহায্য করছেন, কিন্তু তাঁরা জানেন না যে গুঁড়া দুধ ও কেমিক্যাল মিশ্রিত জুসের ব্যবহার শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এবং ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী, দুর্যোগের সময়ে পাঁচ বছরের নিচে শিশুর জন্য গুঁড়া দুধ ও কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার বিতরণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ ও অন্যান্য সংস্থা ২০২০ সালে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা অনুযায়ী গুঁড়া দুধ এবং এসব খাবার শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বন্যার সময় সাধারণভাবে খাদ্য ও পানির অভাব দেখা দেয়। এতে করে অনেক মানুষ দূষিত পানি দিয়ে দুধ গুলিয়ে শিশুকে খাওয়ান, যা শিশুর ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। রাসায়নিক মিশ্রিত জুস ও সিরিয়াল 'এম্পটি-ক্যালরি' অর্থাৎ ক্যালরিশূন্য খাবার, যা শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না।

দুর্যোগের দিনে খাদ্য নির্বাচন করতে হবে এমনভাবে যা কম পরিমাণে হলেও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী, চাল, ডাল, সুজি, তেল, চিনি, বাদাম ও খেজুর ত্রাণ হিসেবে ভালো বিকল্প। রান্না করা খাবার যেমন খিচুড়ি শিশুর জন্য উপযুক্ত, এবং মায়ের দুধ নবজাতক থেকে পাঁচ-ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য আদর্শ।

ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্তরা যদি এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন, তবে তারা সত্যিই কার্যকর সহায়তা প্রদান করতে পারবেন এবং ত্রাণের কাজে তাদের পরিশ্রম ও সহানুভূতির সঠিক ফলাফল পাবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.